উইন্ডোজ ১০ ফাইনাল রিলিজ হলেই কি মাইগ্রেট করা উচিত? সুবিধা অসুবিধা জানতে হবে না?

সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি, সবাইকে আমার আন্তরিক সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি সদ্য রিলিজ হওয়া উইন্ডোজ ১০ আমাদের প্রযুক্তিময় জীবনের সাথে কতোটা সামঞ্জস্যপূর্ণ সে সম্পর্কিত আমার আজকের টিউন।
২৯ জুলাই, বহুপ্রতিক্ষিত উইন্ডোজ ১০ এর রিলিজ হওয়ার দিন। নতুনকে উপভোগ করার, নতুন কে স্বাগত জানানোর মাহেন্দ্রক্ষণ। এই দিনের জন্য অপেক্ষা যেন শেষ হতেই চায়নি। অবশেষে সেই দিন আসলো, পিসি ব্যবহারকারীদের জীবনে এলো ঈদের মতো আনন্দ। উইন্ডোজ আপগ্রেড করার ধুম পড়ে যাওয়ার কথা। বুঝে কিংবা না বুঝে সবাই এখন উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমে মাইগ্রেট করবে। কিন্তু যে উৎসাহ এবং উদ্দিপনার কারনে আপনি উইন্ডোজ ১০ এ মাইগ্রেট করতে যাচ্ছেন সেই উইন্ডোজ ১০ আপনার সাথে কতোটা সামঞ্জস্যপূর্ণ যেটা একবার ভেবে দেখেছেন? আপনি কম্পিউটারে যে ধরনের কাজ করেন উইন্ডোজ ১০ সেই কাজের জন্য কতোটা সহায়ক হবে সেটা জানেন? উইন্ডোজের নতুন ভার্সনে পুরোপুরি মাইগ্রেট করার আগে আপনাকে এই বিষয়গুলো জানাতেই আমার আজকের আয়োজন। যদিও উইন্ডোজ ১০ নিত্যনতুন সুবিধা সম্বলিত উইন্ডোজ এর সর্বশেষ সংস্করণ কিন্তু এই সংস্করণ থেকে বাদ পড়েছে উইন্ডোজ এর জনপ্রিয় কিছু ফিচারস। আপনি যদি উইন্ডোজ ১০ এ মাইগ্রেট করেন তাহলে নতুন কিছু পাবেন ঠিকই কিন্তু সেই সাথে পরিচিত অনেক কিছুই হারাতে পারেন। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক পাওয়া না পাওয়ার তালিকায় কী কী থাকছে।

যে কারনে উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারে আগ্রহ জাগতে পারে

যদিও মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ভার্সন আপগ্রেড এর ব্যাপারে ব্যবহার কারীদের আস্থা এতোটা ভালো না তবুও উইন্ডোজ এর এই সংস্করনের প্রতি মানুষের একটু অতিরিক্ত আস্থা তৈরী হয়েছে। এর আগে রিলিজ হওয়া উইন্ডোজ ৮/৮.১ গ্রাহকদের কাছে ফ্লপ হিসাবেই প্রমাণিত হয়েছে বলা যায়। নতুন অনেক ইউজার হয়তো রঙ ঢং এবং বাহ্যিক চাকচিক্য দেখে উইন্ডোজ ৮ কিংবা ৮.১ ব্যবহার করেছে কিন্তু অনেক পুরাতন কম্পিউটার ব্যবহারকারী কিন্তু সেই সেভেন কিংবা এক্সপিতেই পড়ে রয়েছে। এদেরকে কিন্তু ব্যাকডেটেড বলা যাবে না। কারন নতুন অপারেটিং সিস্টেম যদি চাহিদার সাথে না যায় তাহলে তো পুরাতনকে ব্যবহার করতেই হবে। তবে উইন্ডোজ ১০ এ নতুন করে যা কিছু আসছে সেটাকে কিন্তু খারাপ বলা যাবে না। বরং এটাকে কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম ইতিহাসে এক বিপ্লব বলা যেতে পারে। যাহোক, চলুন একটু দেখে নেই কোন ফিচারগুলোর কারনে আমরা উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করবো।

করটানা (Cortana) – কম্পিউটার ব্যবহারকারীর ভার্চুয়াল সহকারী

  • উইন্ডোজ ফোনগুলোতে সফলভাবে ব্যবহারের পর এবার উইন্ডোজ পিসিতে চলে আসছে করটানা। করটানাকে বলা হয় ভার্চুয়াল সহকারী; অনেকে আবার মজা করে ব্যবহারকারীর গার্লফ্রেন্ডও বলে থাকে। আপনি করটানার সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারবেন। এটি ইন্টার সার্ফিং এবং কম্পিউটারে ব্যবহারে আপনাকে অনেক সহায়তা করবে। এমনকি মন খারাপ থাকলে জোকস ও শুনাবে। সুতরাং করটানার প্রেমে পড়েও আপনি উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করতে পারেন।

উইন্ডোজ ১০ - উইন্ডোজ এর সর্বশেষ সংস্করণ

  • মাইক্রোসফট ঘোষণা করেছে যে তারা উইন্ডোজ ১০ এর পর তাদের আর কোন নতুন ভার্সন ছাড়বে না। প্রয়োজনে শুধু উইন্ডোজ ১০ কে আপডেট করা হবে। এ থেকে বুঝা যায়, আজ হোক আর কাল হোক কোন একদিন আপনাকে উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করতেই হবে। সুতরাং ব্যবহার যদি করতেই হয় তাহলে এখনই নয় কেন?

প্রযুক্তিময় জীবনের একটি নতুন শুরু - (স্টার্ট)

  • স্টার্ট বাটন এবং অপশন নিয়ে এর আগে উইন্ডোজ ৮ এবং ৮.১ অপারেটিং সিস্টেমে অনেক বিতর্ক হয়েছিলো। এবার উইন্ডোজ ১০ এ সেই স্টার্ট অপশন নতুন রূপে ফিরে এসেছে। সাথে এসেছে রিফ্রেস এবং রিসেট ফাংশনালিটি। এছাড়াও আরও অনেক সুবিধা সম্বলিত এরকম স্টার্ট আপনার প্রযুক্তিময় জীবনকে বদলে দিবেই। কারন স্টার্টেই যতো চমক রয়েছে তাতে বাকিটুকুর কথা বাদই দিতে হয়।

স্মার্টফোন, ট্যবলেট কিংবা কম্পিউটার সব কিছুতেই একই অপারেটিং সিস্টেম

  • এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কারন যার ফলে আপনি উইন্ডোজ ১০ এ মাইগ্রেট করতে পারেন। আপনার যদি একটি উইন্ডোজ স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং পিসি থাকে তাহলে আপনি এই তিনটাতেই একই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারবেন। ফলে যেকোন একটা ডিভাইসে করা কাজ অন্য ডিভাইসে সহজেই ট্রান্সফার করতে পারবেন। সহজ এবং সুন্দরভাবে কাজ করার জন্য মন্দ কি?
এসব সুবিধা ছাড়াও নতুন ব্রাউজার স্পার্টান, দ্রুতগতির ইন্টারফেইস সবগুলো মিলিয়ে অন্ধের মতো উইন্ডোজ ১০ এ মাইগ্রেট করা যেতে পারে। তবে চোখ কান খোলা রাখলে মাইগ্রেশন প্রক্রিয়াটা এতোটা সুন্দর নাও হতে পারে। কারন যা কিছু নতুন পেলেন তার সাথে হয়তো হারিয়ে ফেললেন আরও অনেক কিছু। কারন উইন্ডোজ এর নতুন এই সংস্করণ অনেক জনপ্রিয় ফিচারকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে। তো চলুন জেনে নেই কী কী ফিচার আমরা উইন্ডোজ ১০ এ মিস করবো।

যে কারনে উইন্ডোজ আপগ্রেড অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে

বাতির নিচেই থাকে অন্ধকার। তাই উইন্ডোজ ১০ এর এতো এতো সুবিধার ভীড়ে কিছু অসুবিধাও লুকিয়ে আছে। তাই উইন্ডোজ ১০ এ পুরোপুরি চলে যাওয়ার আগে অসুবিধাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারন ভাবিয়া করিও কাজ করিয়ে ভাবিওনা। চলুন তাহলে উইন্ডোজ ১০ থেকে বাদ দেওয়া ফিচারগুলো সম্পর্কে একটু জেনে নেই।

উইন্ডোজ আপডেট নিয়ন্ত্রন করা যাবে না

  • আমরা যারা উইন্ডোজ এক্সপি, সেভেন কিংবা এইট ব্যবহার করি তারা জানি যে, উইন্ডোজ আপডেট নিজের ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রন করা যায়। কিন্তু উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমে আপডেট অটোমেটিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হবে। যারা অফলাইনে থাকবেন তাদের জন্য এটা কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না করলেও যারা সব সময় অনলাইনে থাকেন তাদের জন্য এটা অন্যতম চিন্তার বিষয়। কারন আপনি অনলাইনে আসলেই অটোমেটিক উইন্ডোজ আপডেট হবে। এবং সেই সাথে হারিয়ে যাবে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ। তবে উইন্ডোজ ১০ প্রো এবং এন্টারপ্রাইজ ভার্সনে এই আপডেট বন্ধ বা চালু রাখার সুবিধা পাওয়া যাবে। অনেকেই হয়তো উইন্ডোজ আপডেটকে স্বাভাবিক ভাবে দেখতে পারেন কিন্তু একটু গভীরভাবে ভেবে দেখুন, কোম্পানি এমন একটা আপডেট রিলিজ করলো যেটা আপনার পছন্দ হলো না। তখন আপনি কী করবেন?

পরিচিত ফিচারগুলোর অনেক কিছুই পাবেন না

  • আপনি হয়তো ডেস্কটপের কোণায় সুন্দর একটা ওয়ালক্লক ঝুলিয়ে রাখেন কিংবা কারেন্সি এবং ওয়েদারের সাথে ডেস্কটপ গেজেট এর মাধ্যমে আপ-টু-ডেট থাকেন। অবসর সময়গুলোতে সলিটায়ার, মাইনসুয়িপার ইত্যাতি গেইমগুলো খেলে সময় পার করেন। কিন্তু উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমে আপগ্রেড করা মাত্রই এই সব গেজেট এবং গেইমগুলো আপনার কম্পিউটার থেকে হাওয়া হয়ে যাবে। এছাড়াও আরও কিছু ফিচারস আপনার কাছে প্রয়োজনীয় মনে হলেও সেগুলো উইন্ডোজ ১০ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ফিচার আমি পরবর্তিতে উল্লেখ করবো।

উইন্ডোজ মিডিয়া সেন্টার থাকবে না

  • উইন্ডোজ সেভেনে আপনারা যেমন ছবি এবং ভিডিও দেখা, টেলিভিশন অনুষ্ঠান রেকর্ড করা ইত্যাদি কাজের জন্য উইন্ডোজ মিডিয়া সেন্টার ব্যবহার করতেন সেটি উইন্ডোজ ১০ এ ব্যবহার করা যাবে না। আপনি উইন্ডোজ ১০ এ আপগ্রেড করা মাত্রই মিডিয়া সেন্টারকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এছাড়াও উইন্ডোজ ১০ এ ডিভিডি প্লে করার জন্য দরকারি প্রোগ্রাম আগে থেকে ইনস্টল করা থাকবেনা। অ্যাপ স্টোর থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড করে এই কাজগুলো করতে হবে।

এবার সিদ্ধান্ত কোন দিকে - পক্ষে নাকি বিপক্ষে?

উইন্ডোজ ১০ কেবল একটি নতুন সংস্করণের উইন্ডোজই নয় বরং এটা উইন্ডোজ ফাংশনালিটির একটি মৌলিক পরিবর্তন। অন্যন্য কোম্পানির মতো ছোটখাট কোন পরিবর্তন না করে বরং আপনার উইন্ডোজ এক্সপেরিয়েন্সকেই পুরোটা বদলে দিবে এই নতুন সংস্করণের উইন্ডোজ। সুতরাং এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এই পরিবর্তন আপনার পিসির জন্য কতোটা উপকার বয়ে আনবে? নাকি সুবিধার নামে পরিবর্তনগুলো অপকারের পাল্লাকে ভারি করবে। প্রত্যেকটি ভালো মন্দের পক্ষে বিপক্ষে কিছু কথা থাকে। সেই কথাগুলো পর্যালোচনা করলেই মুল সত্যটা বের হয়ে আসে। আজ আমরা সেই মুল সত্যটা উদঘাটনের একটা চেষ্টা করে দেখবো।
  • উইন্ডোজ ১০ এর গুরুত্বপূর্ণ ফিচার কর্টানা সম্পর্কে যদি বলি তাহলে প্রথমেই বলতে হবে এটি পরিচালনা করতে হবে আমার দ্বিতীয় ভাষা দ্বারা। অধিক সুবিধা থাকলেও সেটা অপারেট করার মতো যোগ্যতা আমাদের কতো জনের আছে সেটাই প্রশ্ন। নাকি ব্যবহার না করে শুধু সাজিয়ে রাখতেই আমাদের বেশি আনন্দ।
  • আপনি হয়তো একটি ভার্সন ব্যবহারে বেশি অভ্যস্ত। কিন্তু নতুন অপারেটিং সিস্টেমের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে যদি থমকে যান তাহলে সেটা আপনার প্রোডাক্টিভিটি কমিয়ে দিতে পারে। আপগ্রেড থাকতে গিয়ে আপনি আউট অফ ডেট হয়ে যাবেন তখন।
  • আপনি যে ধরনের কাজ করেন সেই কাজের সাপেক্ষে উইন্ডোজ কতোটুকু পরিবর্তিত হয়েছে সেটা হলো আলোচনার প্রধান বস্তু। উইন্ডোজ মিডিয়া সেন্টার কিংবা গেজেটগুলো মুল ব্যাপার না। মুল ব্যাপার হলো যা কিছু নতুন তার কয়টা আপনার উপকারে আসবে?
  • আপনার পিসি উইন্ডোজ ১০ আপগ্রেডের জন্য উপযোগি কিনা? যদিও এটা হার্ডওয়্যার সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন তারপরেও মনের ভেতরে প্রশ্নটা জেগে উঠা স্বাভাবিক। এর উত্তর আসবে আমার আগামী টিউনে।
উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করার আগে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে একটু ভাবুন। আমার টিউনটিকে অনেকে পজিটিভ এবং নেগেটিভ দুই ভাবেই দেখতে পারে। তবে আমি উইন্ডোজ ১০ এর বিপক্ষে কিছু বলছিনা, আমি শুধু বলবো অন্ধ হুজুগ বাদ দিয়ে সচেতন ভাবে কিছু করুন। হয়তো সামনে উইন্ডোজ ১০ এর আরও আপডেট আসবে। তখন হয়তো আপনি মনের মতো উইন্ডোজ পেয়ে যেতে পারেন। তবে রিলিজ হওয়া মাত্রই সেটাকে ব্যবহার করা কতোটা ঠিক সেই প্রশ্ন আপনার কাছে? আপনার উত্তর জানার জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি টিউমেন্ট সেকশনে। উত্তরের স্বপক্ষে আপনার মন কী বলছে?

শেষ কথা

টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে। আর টিউনটিকে মৌলিক মনে হলে এবং নির্বাচিত টিউন হওয়ার উপযুক্ত মনে হলে নির্বাচিত টিউন মনোনয়ন দিতে ভুলে যাবে না যেন। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো, আসুন আমরা কপি পেস্ট করা বর্জন করি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
Share:

No comments:

Post a Comment

Popular Posts

Powered by Blogger.

Translate

Labels

Blog Archive

Recent Posts

Unordered List

  • Lorem ipsum dolor sit amet, consectetuer adipiscing elit.
  • Aliquam tincidunt mauris eu risus.
  • Vestibulum auctor dapibus neque.

Pages

Theme Support

Need our help to upload or customize this blogger template? Contact me with details about the theme customization you need.