অনলাইনে লেনদেন জন্য বিশ্বের সব চাইতে জনপ্রিয় পেপাল সার্ভিস এখন সাইনআপ করার বাংলাদেশের নাম দেখা যাচ্ছে! তবে বর্তমানে শুধু বিজনেস পেপাল Account সাইনআপ করা যাচ্ছে, তবে ধারনা করা হচ্ছে মুল ধারার পেপাল সার্ভিস বাংলাদেশে চালু হবে না, বাংলাদেশীদের জন্য বিজনেস সার্ভিস পদ্ধতিতে XOOM মাধ্যমে বাংলাদেশিদের জন্য টাকা উঠানোর সুযোগ দিতে পারে পেপাল ।
পেপাল সার্ভিস বাংলাদেশে চালু না থাকায় বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, ফ্রিল্যান্সাররা তাদের উপার্জিত অর্থ অবাধে দেশে আনতে পারবে জেনে ফেসবুকে অনেক ফ্রিল্যান্সারকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে । তবে এই বিষয়ে পেপাল থেকে সত্যতা জানতে ও বিস্তারিত আপডেট পেতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে ।
তবে সাইনাপের পর ভেরিফাই করার সুযোগ দিচ্ছে না পেপাল ।
বাংলাদেশে ২০১১ সালে পেপ্যাল আসার কথা থাকলেও তার চূড়ান্ত বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে চলতি বছরেই। বিশ্বের ১৯৪তম দেশ হিসেবে অনলাইনে অর্থ লেনদেনের সুযোগ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। ইতিমধ্যেই ক্যালিফোর্নিয়ায় পেপ্যালের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রেসিডেন্ট-এর সাথে দু’ দফা বৈঠকও করেছেন।
চলতি বছরের মধ্যেই এই সেবা বাংলাদেশে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, যার প্রত্যাশায় ছিলেন বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তারা।
তিনি বুধবার বলেন, “ইন্টারনেটের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনে পেপাল সেবার পুরোপুরি না এলেও এই পেমেন্ট সিস্টেমের বেশিরভাই সুবিধা বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছে।”
পেপাল একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, যারা অর্থের স্থানান্তর বা হাতবদল ইন্টারনেটের মাধ্যমে করতে সহায়তা দিয়ে থাকে। অননলাইন স্থানান্তরের এই পদ্ধতি গতানুগতিক অর্থের লেনদেনের পদ্ধতি যেমন চেক বা মানি অর্ডারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) দেশে পেপ্যাল নিয়ে আসার জন্য উদ্যোগ নেয়। ২০১২ সালে এসে এটি বাস্তবায়নের জন্য নানান ভাবে চেষ্টা করতে থাকে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সে বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে পেপ্যাল চালু হচ্ছে বলে ঘোষণাও দেওয়া হয়েছিল।
তৎকালে বেসিসের সভাপতি মাহবুব জামান এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, আগামী জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর (বছরের তৃতীয় প্রান্তিক) মাসের মধ্যে বাংলাদেশে পেপ্যাল তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। তবে তা চালু হয়নি। একই বছরের ডিসেম্বরে এটুআই এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী এই প্রতিবেদককে বলেন, পেপ্যাল বা পেপ্যালের মত যেসব প্রতিষ্ঠান, গুগলের অ্যাডসেন্স তারাও বলেছে যে মানি ট্রান্সফারের ব্যাপারটা তাদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ কেননা যারা গুগলের অ্যাডসেন্স নিয়ে কাজ করে তাদের জন্য টাকা নেয়াটা খুবই কঠিন এবং গুগলের জন্য টাকা দেয়া বা নেয়াটা কষ্টকর। তাই টাকা বাংলাদেশে আনা বা বাংলাদেশ থেকে পাঠানো দুটোই বিবেচনার বিষয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু নীতিমালা রয়েছে সেগুলো মাথায় রেখেই আমাদের কাজ করতে হবে। এগুলো সব কিছু মিলিয়ে আমি বলব বাংলাদেশ ব্যাংক খুব নিবিড় ভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং পেপ্যালও খুব দ্রুত বাংলাদেশে আসবে এবং ফ্রিল্যান্সারদের জন্য মানি ট্রান্সফারে যেসব জটিলতা রয়েছে সেগুলো কয়েক মাসের মধ্যে অনেকাংশে সমাধান হবে বলে আমি মনে করছি।
এর কয়েকদিন পরেই দেশের প্রথম ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড মেলায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, আগামী বছরেই (২০১৩ সালে) দেশে পেপ্যাল চালু হবে। ২০১৩ সালের এপ্রিলের শুরুতে সিলেটে ই-বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আগামী দেড় মাসের মধ্যে দেশে পেপ্যাল চালু হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানও কয়েক দফায় জানিয়েছিলেন দেশে পেপ্যাল আসছে।
কিন্তু এর আগে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পেপ্যালের আন্তর্জাতিক সদর দফতর থেকে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেন। তারা ওই সময় বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠকও করেন। সে সময় তারা আইনগত নানা দিক পর্যালোচনা করেন। বাংলাদেশে অনলাইন পেমেন্টের ঝুঁকি পর্যালোচনা করে একটি মতামত দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটির সদর দফতর ক্যালিফোর্নিয়ায়। মূলত ওই প্রতিনিধি দলের মতামতের ভিত্তিতে ২০১৩ সালের শেষ দিকে পেপ্যাল সদর দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আপাতত তারা বাংলাদেশে আসছে না। সম্প্রতি বাংলাদেশে পেপ্যাল না আসার অফিসিয়ালি সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মোঃ মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, এটা ঠিক পেপ্যাল আপাতত বাংলাদেশে আসছে না। তবে কোনো দুর্বলতার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, আমাদের সব নীতি তাদের মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি আমাদের জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার জন্য আলাদা সফটওয়্যার করে তারপর আমাদের দেশে আসবে। এমন কথা জানিয়ে পেপ্যালের প্রধান নির্বাহী আমাদের চিঠি দিয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করব যত দ্রুত সম্ভব পেপ্যালকে দেশে নিয়ে আসতে। ২০১৪ সালে কয়েকবার সজীব ওয়াজেদ জয় আশ্বাস দিয়ে বলেন, পেপ্যাল দেশে আনার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সেই আশার আলোর প্রদীপ জ্বালাতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।