ছাত্রজীবন শেষে কর্মজীবনে পা দিয়েই সর্বপ্রথম যেটার সম্মুখীন হতে হয় তা হলো চাকরির ইন্টারভিউ। বিভিন্ন প্রশ্নবাণ নিক্ষেপ করে প্রার্থীকে বেহাল দশায় ফেলে দেন জুরি বোর্ড বা নিয়োগকর্তারা। সেই বেহাল দশা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ও চাকরি নিশ্চিত করে ফেরার উপায় নিয়েই আজকের এই আলোচনা। আজকে আমরা আলোচনা করব এমন একটি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে যা মোটামুটি সকল ইন্টার্ভিউতেই করা হয়ে থাকে। কিন্তু উত্তর দিয়ে নিজের জায়গা নিশ্চিত করে আসতে পারেন গুটিকয়েকজন মাত্র।
“আপনি আপনার নতুন চাকরি থেকে কি আশা করছেন?” কিংবা “আপনি আপনার চাকরি থেকে কী পেতে চান?” এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে দিয়ে থাকেন। কিন্তু কি সেই উত্তর যা আপনাকে অনন্য করে তুলবে এবং আপনার স্থান পাকা করবে কোম্পানিতে? তা নিয়েই নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। মোট চারটি ধাপে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যেতে পারে।
১. নিজের দক্ষতা প্রকাশ করা
প্রশ্নটা আপনাকে নিয়ে হলেও উত্তরটা দিতে হবে নিয়োগকর্তার দৃষ্টিভঙ্গি চিন্তা করে। অবশ্যই, মোটা অঙ্কের টাকা, বিশ্রামের জন্য যথেষ্ট সময় অথবা কাজের চাপ তুলনামূলক ভাবে কম , এমনটা আশা করে থাকলে, তা ভুলেও মুখ ফুটে বলতে যাবেন না। এসবের পরিবর্তে, উত্তরে আপনার দক্ষতা কিংবা কিভাবে আপনি আপনার নতুন অবস্থানটি সুন্দরভাবে ব্যবহার করবেন যাতে আপনার এবং কোম্পানি দুই’ই লাভজনক অবস্থানে থাকবে তা ব্যক্ত করুন। নিয়োগকর্তা যেন বুঝতে পারেন আপনি আপনার দক্ষতা দিয়ে আপনার নতুন অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে এই কোম্পানির জন্য ভাল কিছু করতে চান।
আমি এই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা নিয়ে চর্চা করে আসছি বেশ কয়েক বছর ধরে। আমি এমন একটি অবস্থান চাই যেখানে আমি আমার এই চর্চা সুন্দরভাবে চালিয়ে যেতে পারবো এবং আমার দক্ষতাকে আরো সুনিপুণ করতে পারবো।
২. কাজের প্রতি প্রেরণা ব্যক্ত করা
একজন নিয়োগকর্তা আশা করেন একজন কর্মী শুধুমাত্র মাসের শুরুর বেতনের জন্য কাজ এর প্রতি আগ্রহ পোষণ করবে এমনটা যেনো না হয়। কাজ নিয়ে আপনার আগ্রহ প্রকাশ করুন প্রথমেই। উত্তরের মাধ্যমে জানান দিন কর্মক্ষেত্রের এই নতুন অবস্থানটি কিভাবে হয়ে উঠতে পারে আপনার প্রেরণার অংশ।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই কাজ আমাকে শুধুমাত্র আমার নিজের কর্ম দক্ষতা নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি সুযোগ দেয় নিজের কাজকে উপস্থাপন করার। নিজের কাজ উপস্থাপন করার মাধ্যমে আমি অর্জন করি আত্মবিশ্বাস। এই অবস্থান আমাকে আরো কঠোর পরিশ্রমের প্রেরণা দিবে বলে আশা করছি।
৩. দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা
একজন কর্মী নিয়োগের অর্থ হলো বিনিয়োগ করা। একজন নিয়োগকর্তার কাজ, সঠিক কর্মী নির্বাচন করে সুষ্ঠু বিনিয়োগ করা। নিজেকে সঠিক প্রার্থী হিসেবে প্রমাণ করতে হলে নিজের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তুলে আনতে হবে যাতে আপনার সুদূরপ্রসারী চিন্তা প্রকাশ পায়। যদি না আপনি স্বল্প সময়ের জন্য যোগদান করতে চান, তবে যেকোনো কিছু যা নির্দেশ করবে আপনার এবং কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক, তা তুলে আনা উচিত।
আমি অবশ্যই এমন একটি অবস্থান আশা করি যেখানে আমি নিজের পেশাগতভাবে উন্নতি করতে পারব। এটি আমার ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভবিষ্যতে আমি নিজেকে ব্যবস্থাপনাগত দায়িত্বে দেখতে চাই। এই অবস্থান আমাকে সাহায্য করবে আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে।
৪. কোম্পানি বা সংস্থা সম্পর্কে বলা
উত্তর শেষে কোম্পানি বা সংস্থা সম্পর্কে বলে শেষ করা উচিত। প্রশ্নের উত্তরের শেষে, এর মধ্যে যা নিয়ে আলোচনা করেছেন তার সারমর্ম বলে ইতি টানলে সমাপ্তি সুন্দর হয়। তাছাড়া শেষে কর্মজীবন নিয়ে আপনি কতটা উৎসাহিত এবং নতুন কর্মস্থল নিয়ে কতটা আনন্দিত তা প্রকাশ করলে নিয়োগকর্তার মনে তা দাগ কাটবে। একটি গোছানো সুন্দর উত্তর আপনাকে অবশ্যই আলাদা নম্বর প্রাপ্তিতে সহায়তা করবে। যা আপনাকে অন্যান্য প্রার্থীদের তুলনায়, তালিকায় ওপরের দিকে রাখতে সাহায্য করবে।
সবশেষে বলতে চাই, আমি এমন একটি অবস্থান চাই যেখানে আমার দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারবো এবং পরবর্তীতে নিজের কাজের ফলাফল দেখতে পাবো, যা আমাকে ভুল ত্রুটি থেকে শিখতে সাহায্য করবে। কোম্পানিতে অবস্থান একটি পদবী মাত্র। আমার মূল লক্ষ্য নিজের কাজের মাধ্যমে কোম্পানিকে তুলে ধরা। তাছাড়া কাজটি শুধুমাত্র আমি কোম্পানির জন্য নয়, করবো নিজের জন্যও কেননা এতে আমি আনন্দ ও তৃপ্তি পাই। এই কোম্পানির লক্ষ্য এবং কাজ নিয়ে আমি পূর্বে জেনেছি এবং আমি মনে করি এটি আমাকে এখানে কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে। আমি এই কোম্পানিকে নিজের কর্মস্থল করে নেওয়ার সুযোগ নিয়ে দারুণ আনন্দিত। এই কোম্পানিতে কাজ করতে পারবো ভেবে উৎসাহ অনুভব করছি।
একটি উত্তর আপনার অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে খুব দ্রুত। আপনি নিজের দক্ষতার আলোচনার দিকে অতিরিক্ত গুরুত্ব আরোপ করতে পারেন। নিজের একাধিক দক্ষতার দিকে আলোকপাত করতে পারেন। সেক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত না বলে সংক্ষেপে বললে উত্তর সাবলিল থাকবে। এতে তেমন একটা প্রভাব পরবে না এবং উত্তরের গঠনেও তেমন একটা পরিবর্তন আসবে না।
সবশেষে এই প্রশ্নের উত্তর মনে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, সততার সাথে উত্তর দেওয়া যা আপনার মধ্যকার আত্মবিশ্বাস বের করে আনবে। বানিয়ে কিংবা মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে শুধুমাত্র চাকরির স্বার্থে উত্তর দিতে গেলে তার ছাপ আপনার চেহারায় ফুটে উঠবে যা নিয়োগকর্তার দৃষ্টিগোচর হবে না। তাই আত্মবিশ্বাসের সাথে এবং নিয়োগকর্তার দৃষ্টিভঙ্গির কথা মাথায় রেখে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারাটাই সার্থকতা। এতে আপনার প্রাপ্য আপনি অবশ্যই অর্জন করেই ছাড়বেন।
No comments:
Post a Comment